ছন্দছাড়া কথা অকথার গদ্য

ছন্দছাড়া কথা অকথার গদ্য
_____________________________________________________________________________________________________________________
এই ব্লগে আমার যে কোন পোষ্টে সকল পাঠকের সুচিন্তিত মন্তব্য আশা করি।

সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

|| ভূতের মন, ঘর, সংসার || [১]

 ||.......[ ১ ]

--- কীরে, সক্কাল বেলা ওরকম হুঁকোমুখো হয়ে বসে আছিস কেন ?
--- আর বলিস না ভাই, বোস এখানে।
--- মান্নাদা, দুটো চা দাওতো ভাল করে। ( যদিও মান্নাদার দোকানে ভাল চা বলতে যে কী তা কেউ জানেনা ) এবার বল কী হয়েছে, তোর তো রোজই কিছু না কিছু একটা লেগেই থাকে।
--- হ্যাঁ, হ্যাঁ, থাক অনেক হয়েছে। ঘটনা ঘটাবে তোর বউদি আর তুই বলবি ‘আমার অনেক হয়েছে !’ সব সমান।
--- আমার বউদি আবার তোর কী করল ? দ্যাখ, একটু বুঝে শুনে কথা বল। তুই তো নেশা-টেশা তেমন করিস বলে শুনিনি। তা মাথাটা খারাপ হ’ল কী করে ?
--- আরে বাবা, তোর যে বউদি আমার সঙ্গে থাকে......।
--- দ্যাখ সামন্ত, বাড়া বাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। খোলসা করে বলত কী হয়েছে। নে, চায়ে চুমুক দে। মান্নাদার চায়েই তোর ঘোর কাটবে।
--- হ্যাঁ, শোন। ঐযে, তোর যে বউদি আমার...... না থাক, মানে আমার যে স্ত্রী...... না হচ্ছে না। দূর ছাই, এই তোকে দেখলেই আমার সব কেমন গুলিয়ে যায়। .........বলতো, ভূতেদের কি মন খারাপ হয়? এ ব্যাপারে তুই জানিস কিছু?
--- একে ভূত, তারপর ভূতের মন, তায় আবার সেই মন ‘খারাপ’। বেশ গোলমেলে ব্যাপার। খুলে বলতো কী হয়েছে। পেট ঠিক আছে তো? পেট খারাপ হলে ভূতের স্বপ্ন দেখে ভয় পেতে পারিস তো তাই বললাম।
--- সব সময় মস্করা করিস না তো, ভাল্লাগে না। আমি মরছি আমার জ্বালায়, উনি করছেন মস্করা, যৎতোসব।
--- শোন, আমি ছোট বেলায় ভূতটুত দেখেছি ঠিকই, কিংবা ভূতুরে কাণ্ডও বলতে পারিস। কিন্তু ভূতের মন ব্যাপারটা আমি কখনো বুঝিনি। তাছাড়া নামী দামী লোকের লেখা ভূতের গল্প যা পড়েছি টড়েছি সেখানে ভুতের মন পেলেও সেসব খারাপের কথা কোথাও পাইনি।
--- কোথাও নেই, না ?
--- না। মন টইটম্বুর ভাল থাকার ব্যাপারটা পেয়েছি উপেন্দ্রকিশোর রায়ের গল্প ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এ। ভাল মানে, চূড়ান্ত ভাল ! ঐযে বললাম, টইটম্বুর মন ভালর হৈ হুল্লোড় কাণ্ড, রাজা খুশির চোটে তিন তিনটে অসম্ভব বর দিয়ে ফেল্লো। মন খারাপ নেই।
--- সত্যি বলচিস ?

--- দ্যাখ সামন্ত, সারা দুনিয়ায় কোথায় কী আছে তা তো আমি বলতে পারব না তবে ঠাকুরদা-ঠাকুরমা’র মস্ত বড় বড় ঝুলি ছিল। সেখানে কোনো ভূতের বা রাক্ষসের মন খারাপ ছিল কি না মনে পড়ছে না। 
--- তাহলে, ভূতের মন খারাপ হয়না। তার মানে যার মনখারাপ হয় সে ভূত নয়। তার মানে তোর বউদি, হুঁহ্‌ যৎতোসব .....। এ্যাই, তুই বাজারে যা। আমি এক্ষুনি ঘুরে আসছি, বাজারে দেখা হবে।
--- মান্নাদা, সামন্তর কী হয়েছে বলতো ?
                                 **********  ********** 

শুরুতে~~~~~~~~~~~

দুনিয়ার কত কত ভাবনা ভিড় করে আসে মনের ভেতরে, বাসা বাঁধে। ওখানে এত জায়গা কোথায় পায় ! ভাবনাদের যেন আরাম বিরাম নেই, নেই অন্য কোন কাজ-কর্ম। সব সময় চঞ্চল, অস্থির ! মন আনমনা হয় তো ওদের নিয়ে ভাবতে বসে বলেই। 

ভাবনার না আছে জাত-কূল, না আছে ধর্ম-কর্ম। সে এক সর্ব-সম্প্রদায়ের মহা সম্মিলনী। কোন ভাবনা বেশ ভার ভারিক্কী আবার কোন ভাবনা একেবারেই সাধারণ ভাল মানুষ। আরেক ভাবনা আছে মন-ছাড়া। এত ছন্নছাড়া এরা ! ওরে বাবা একটু শান্ত হয়ে বোস, দু দণ্ড তোকে দেখি বুঝি, তা না, বলা নেই কওয়া নেই-- চলল। কোথায় তা' কে জানে ! আবার কেউ আছে মন কাড়া, মন নাড়া। তারও কত ছিরি, কত রকমফের ! আদরে আলতো ছুঁয়ে একটু নাড়া দিলে তো তাকে খুব একটা মনে থাকে না। যদিবা কখনো সখনো মনে পড়ে, তো একটু ঠোঁটচাপা হাসি আর নয়তো ক্ষনিক থমকান এক মেঘলা মুখ ! আর যদি 'মনে রেখো' বলে জোরে নাড়িয়ে দিয়ে যায় সবকিছু তবে তাকে ভোলায় কার সাধ্যি। তখনযে উঠতে বসতে নাইতে শুতে দোলনা হাসি, গান নয়ত আকাশ কালো ঈশানী মেঘ--- মেঘ ভাঙা বৃষ্টি।

ভিড় করে আসা এসব ভাবনায় কত কথা-অকথা ছবি গান গদ্য পদ্য কবিতা। তাদেরই আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে খেলে বেড়ায় ছোট্ট ছোট্ট লেখা, যেন একটা ছোট্ট কণা। কথা অকথার সেসব ছোট্ট কণা হয়ে উঠতে পারে স্ফুলিঙ্গ। হয়ে উঠতে পারে সব অনাচার পোড়ানো এক অগ্নিশিখা, এক দাবানল, এক সুপ্ত গিরির অগ্নুৎপাত! 

ভাবনার সেই কথা অকথার গদ্যগুলোর সবার না আছে কোন ছাঁদ, না আছে কোন ছন্দ। সেসব ছন্দ অছন্দের গদ্যকথা নিয়েই জীবন চলা............।।